ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ
![](http://azan.webappline.com/wp-content/uploads/2020/03/Journal-Ihram-Arafah.jpg)
ইহরাম অবস্থায় কি কি কাজ নিষিদ্ধ, কি কি কাজ করা যাবে এবং ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ করে ফেললে করনীয় কি সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোকপাত করা হলো।
ইহরাম অবস্থায় যে সব কাজ করা বৈধ নয়
ইহরামের নিয়্যাত করার পর মুহরিমের (যে ইহরাম অবস্থায় আছে) জন্য নিষিদ্ধ কাজগুলো ১১ টি যা তিন ধরণে বিভক্তঃ
১ম ধরনঃ যা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য নিষিদ্ধ
২য় ধরণঃ যা শুধুমাত্র পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ
৩য় ধরণঃ যা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ
ছবি সৌজন্যেঃ মুসলিম ট্যুরিষ্টার
প্রথম ধরণঃ যে বিষয়গুলো পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য নিষিদ্ধ
১) ইহরামের নিয়্যাত করার পর মুহরিমের জন্য চুল কাটা বা উঠানো জায়েয হবে না। কিন্তু যদি শরীর চুলকানোর সময় ভুলে বা না জেনে কোন লোম উঠে যায় বা পড়ে যায়, তার উপর দম বা ফিদইয়া নেই।
২) মুহরিমকে সকল প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
৩) কাফফায ব্যবহার জায়েয হবে না। কাফফায হলো হাত মোজা যা পরবে না, তবে পা মোজার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধ করা হয়নি।
৪) মুহরিম কাওকে বিবাহ করা বা বিবাহের প্রস্তাব দিতে পারবে না। চাই নিজের জন্য বা অন্যের জন্য হউক।
৫) স্ত্রী সহবাস, যৌনক্রিয়া বা উত্তেজনার সাথে স্ত্রীর দিকে তাকানো, বা স্পর্শ করা, চুম্বন বা আলিঙ্গন করা বা এ জাতীয় কথা বা কাজ করা মুহরিমের জন্য জায়েয নয়।
৬) কোন স্থলভাগের প্রানী মেরে ফেলা বা শিকার করা বা এতে সহযোগিতা করা যাবে না। ৭) এছাড়া হারামের সীমানার ভিতরে এমনিতেই গজানো কোন গাছ বা সবুজলতা কাটা নিষেধ (ইহরাম অবস্থায় বা ইহরাম ছাড়া)
৮) এছাড়া হারামের সীমানার ভিতরে পড়ে থাকা কোন বস্তু নেওয়া বা উঠানো যাবে না
দ্বিতীয় ধরণঃ যা শুধুমাত্র পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ, মহিলাদের জন্য নয়
১) দর্জি দ্বারা বা বিশেষভাবে সেলাই করা কাপড় পরা। যেমনঃ জামা, পায়জামা বা মোজা বা এ ধরণের যত কিছু তা পরা যাবেনা। তবে ইহরাম বাঁধতে নীচের অংশের কাপড় না পেলে পায়জামা ব্যবহার করা চলবে এবং জুতা না পেলে মোজা পরা জায়েয।
২) মাথার সাথে লেগে থাকে এমন কিছু দ্বারা পুরুষদের মাথা ঢেকে রাখা।
তৃতীয় ধরণঃ যা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ যা পুরুষদের জন্য নয়
১) মহিলাদের জন্য বোরখা বা নিকাব বা অন্য উপায়ে মুখের উপর আচ্ছাদন দেয়া, মুখ ঢাকা জায়েয নয়। পর পুরুষের সামনে ওড়না বা এ ধরণের কিছুর দ্বারা তাদের মুখ ঢাকা উচিত।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ করে ফেললে কি করতে হবে?
যদি ভুলে বা না জেনে (মূর্খতাবশত) ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজের কোন একটি কাজ করে ফেলে তাহলে এর জন্য কোন দম, ফিদইয়া বা কিছুই লাগবে না। মনে হওয়ার সাথে সাথে এ কাজ আর করবে সিদ্বান্ত নিতে হবে এবং এজন্য আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করবে (ক্ষমা চাইবে), তবে প্রাথমিক হালালের আগে স্ত্রী সঙ্গম করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।
কেও যদি উপরোল্লিখিত নিষিদ্ধ কাজ সমূহ ইচ্ছাকৃত ভাবে বা বাধ্য হয়ে বা ওযরবশত কাজ করে তাকে অবশ্যই ফিদইয়া দিতে হবে। ফিদইয়া হলো নীচে বর্ণিত ৩ টির মধ্যে একটি কাজ করাঃ
- হারাম এলাকায় একটি ছাগল যবেহ করে এর গোস্ত ফকীর-মিসকিন্দের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া অথবা
- ৬ জন মিসকিনকে খাবার দিতে হবে, প্রত্যেক মিসকিন কে আধা সা (অর্থাৎ ১ কেজি ২০ গ্রাম) পরিমাণ একবেলা খানা খাওয়াতে হবে অথবা
- এক নাগাড়ে বা আলাদাভাবে ৩ দিন সিয়াম রাখতে হবে
কোন কাজের জন্য কি ধরণের ফিদইয়া দিতে হবে তা বিশদভাবে জানার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম মক্কী এর লেখা প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা বইটি সুপারিশযোগ্য।
ইহরাম অবস্থায় যে সব কাজ করা বৈধ
ইহরাম অবস্থায় নিম্নবর্ণিত কাজ সমূহ করা যাবেঃ .
- গোসল করা
- পরনের ইহরাম বদলিয়ে আরেক জোড়া পরতে পারবে
- পানির মাছ ধরা
- শিকার ব্যতীত অন্য পশু-পাখি (যেমন গরু, ছাগল, মোরগ, ইত্যাদি) যবেহ করা জায়েজ আছে
- মানুষের জন্য ক্ষতিকর প্রাণী যেমনঃ মশা, মাছি, চিল, কাক, সাপ, ইঁদুর বিচ্ছু, পিঁপড়া, তেলাপোকা, কুকুর, ইত্যাদি মারতে পারবে
- শরীর চুলকানো যাবে
- বেল্ট, আংটি, ঘড়ি, চশমা ব্যবহার করতে পারবে
- ছাতা, তাঁবু, অনুরুপ গাড়ীর ছায়ায় বসতে পারবে
- আক্রমনকারীকে দমন করতে পারবে
সুত্রঃ
[১] হজ্জের কাজ কিভাবে করবেন? এ কিউ এম মাছুম বিল্লাহ, সম্পাদনাঃ ডঃ আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া , ইসলামহাউজ
[২] হজ্জ ও উমরাহকারীদের নির্দেশনা সিরিজ, আল-মাসজিদুল হারাম ও আল-মাসজিদ আন-নাবাওয়ীর মুখ্য পরিচালনা দফতর, সা’ য়ুদী ‘ আরব